জমিদার ও কৃষক

একবার এক জমিদারের থেকে দরিদ্র কৃষক বেশ খানিকটা ঋণ করলেন। সময়মতো তা শোধ করতে না পারায় জমিদার মহাশয় তাকে চাপাচাপি শুরু করলেন। কিন্তু কৃষক বড়ই অসহায়। তার সে সামর্থ্য নেই।

সম্বল বলতে কৃষকের এক সুদর্শন মেয়ে এবং একটি বাড়ি।

অন্যদিকে জমিদারের বয়স ষাটের কোঠায়। কবরে যেন এক পা গিয়ে রয়েছে! কিন্তু তাও সে লোভী!

এবার জমিদার যখন দেখলো কোনভাবেই কৃষক টাকা দিতে পারবে না তখন তিনি কৃষককে তার মেয়ের সাথে জমিদারের বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। বিনিময়ে সব ঋণ মওকুফ হবে।

কৃষক পড়লেন মহা বিপদে! শেষে গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে বিচার গেলো। দু’জনেই হাজির সেখানে।

বিচারক মহাশয় সব শুনে অনেক ভেবে-চিন্তে একটা উপায় বের করলেন। তিনি বললেন একটা গেম হবে। সেখানে একটা ব্যাগের মধ্যে একটি সাদা ও রঙিন বল রাখা হবে। সেখান থেকে কৃষকের মেয়ে যদি সাদা বল বেছে নেয় তবে, তাকে জমিদারকে বিয়ে করতে হবে। বিনিময়ে জমিদার তার বাবার সব ঋণ মওকুফ করে দিবে।

আর যদি সে রঙিন বল বেছে নিতে পারেন তবে তাকে জমিদারকে বিবাহ করতে হবে না। এবং জমিদারের অবিবেচনা প্রসূত চিন্তা-ভাবনার জন্য কৃষকের ঋণও মওকুফ করে দিতে হবে। আর কৃষকের কন্যা যদি কোন বল না উঠায় তাহলে তার পিতাকে আজীবনের জন্য জেলে বন্দী করা হবে।

দু’পক্ষই রাজি হলো। কিন্তু জমিদার নির্ধারিত দিনে চাতুরী করে ব্যাগের মধ্যকার রঙিন বল বদলে দুটোই সাদা বল রেখে দিলেন। ঘটনাক্রমে তা আবার কৃষকের মেয়ে জানতে পারলো। এরপর সে ভাবতে থাকে কিভাবে এর সমাধান করা যায়।

একবার সে ভাবলো সবাইকে ঘটনা জানিয়ে দেবেন। কিন্তু পরে আবার ভাবলেন সে যদি এটি বলে দেয় তাহলে, আবার ব্যাগে বল রাখা হবে আর তখন রঙ্গিন এবং সাদা দুটি বলই থাকবে। তাতে লাভ কিছু হবে না।

এরপর পঞ্চায়েতের নির্দেশে সে ব্যাগটিতে হাত দিল এবং একটি বল হাতে নিয়ে কায়দা করে ইচ্ছে করেই নিচে থাকা আরো কিছু বলের মধ্যে ফেলে দিল। এরপর সে বলল- “হে ভগবান, বল টিতো পড়ে গেলো, এবার কি হবে?”

পঞ্চায়েত বললেন- যে বলটি নিচে পড়েছে সেটিই তুমি তুলেছ, তাহলে দেখো ব্যাগে কি রঙের বল আছে, যে রঙের বলটি নেই সেটিই তুমি তুলেছ।

এরপর সবাই দেখল যে ব্যাগে কালো রঙের বলটি পড়ে আছে। তাই সবাই ধরে নিল যে, কৃষকের কন্যা রঙ্গিন বলটি তুলেছে।

শর্ত সাপেক্ষে জমিদার কৃষকের সব ঋণ মওকুফ করে দিতে বাধ্য হল এবং কৃষকের কন্যাও বেঁচে গেল!

বি.দ্র: সব সময় সব কিছু জানলেই বলতে নেই। কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়। আর কেউ চাতুরী করার সুযোগ পেলেই যে তিনি জিতে যাচ্ছেন তাও ভাববার কোনো কারণ নেই। দিনশেষে ফলাফল ভিন্নও হতে পারে।