মামুন
হৃদয় আলম: ঢাকার গাজীপুরের একটি পোশাক কারাখানায় কাজ করছিলেন মামুন। ১৬ বছরে ধরে করা সেই চাকরিতে ভালোই চলছিলো সংসার। কিন্তু বছর দুয়েক আগে যখন দেশে মহামারির প্রকোপ ক্রমশই বাড়ছিল, তখন ‘বিনা মেঘেই বজ্রপাত’ হয় মামুনের। চাকরি হারান তিনি।
অথৈ সাগরে ভাসতে থাকা মামুনের জীবনে খড়কুটোর মতো ভেসে আসে একটি অবলম্বন। বাবার কাছে থেকে শখ করে শেখা বাঁশি বাজানোকেই জীবিকার শেষ পথ হিসেবে বেছে নেন তিনি। এরপরের গল্পটা একজন বাবার, সংসার টিকিয়ে রাখা এক যোদ্ধার।
চল্লিশের কোটায় পা রাখা মামুন জানান, কিশোর বয়সে বাবার কাছে বাঁশি বাজানো শিখেছিলেন। ছিলো বাঁশি তৈরির কারখানাও। করোনার প্রভাবে যখন চাকরি চলে গেলো তখন অন্য কোনো উপায়ন্তর না দেখে বন্ধ হয়ে যাওয়া বাবার সেই ছোট্ট কারখানা আবারও চালু করেন তিনি।
মামুনের বাড়ি শ্রীপুরের ভাংনাহাটিতে। তার কারখানাও সেখানে। এতে কাজ করেন তিনজন। বানানো বাঁশিগুলো মামুন ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন জয়দেবপুর, গাজীপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়।
‘করোনা আসার পর চাকরি গেলো। এরপর ব্যবসা শুরু করলাম। যখন এই রোগের প্রকোপ একটু কমে তখন ভালোই বেচা-বিক্রি হয়। কিন্তু অনেকেই বাঁশি ধরতে ভয় পান। মহামারি বাড়লে দুর্ভোগও বাড়ে- বলেন মামুন।’
কিন্তু শুধু বাঁশি বেঁচে আর সংসার চলে না মামুনের। তাই জায়গায় জায়গায় ঘুরে বাঁশি বাজানো শেখান তিনি। বলেন, ‘ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমার শিষ্য আছে। আমি তাদের বাঁশি বাজাতে শেখাই। অনেকে সম্মান করে ওরা (শিক্ষার্থীরা), ভালো লাগে।’
করোনা আরও বাড়লে কি হবে এমন প্রশ্নে কিছুটা চিন্তায় পড়ে যান মামুন। বলেন, ‘চাকরিটা যখন চলে গিয়েছিলো, তখন ছেলে-সন্তানদের নিয়ে বেশ কষ্ট করেছি। একই ধরনের কষ্টে পড়ে যাবো এখন যদি সব বন্ধ হয়ে যায়। হয়তো না খেয়েও থাকতে হবে।’
দিনে কি পরিমাণ বিক্রি হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন কয়েকটা বাঁশি বেঁচতে পারি। হাজার দুয়েক টাকা সারাদিনে বেঁচতে পারলে মোটামুটি চলে যায়।’