হৃদয় আলম: গাজীপুরের কাশিমপুর থেকে কিছুটা এগিয়ে সুলতান মার্কেটের সরু গলিতে ঢুকলে অন্য রকম এক দোকানির সাথে দেখা হয়ে যাবে আপনার।
প্রথম দেখায় কিছুটা চমকে উঠতে পারেন। কারণ হেলাল উদ্দিন অন্যদের মতো হাত বাড়িয়ে পণ্য তুলে দিতে পারেন না। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত নেই।
হেলাল এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি বাঙলা কলেজে সমাজকর্ম বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। ক’দিন হলো ঢাকায় এসেছেন। ফাঁকে এখন ভাইয়ের ব্যবসা সামলাচ্ছেন।
যশোরের কন্দর্পপুর গ্রামে কৃষক পরিবারে জন্মেছেন দুই হাত ছাড়া হেলাল। বেড়ে উঠেছেন সেখানেই। সন্তানের বিষয়ে কখনও তার বাবা-মা হতাশ হননি। বরং প্রতিবেশীসহ অন্যদের তারা বোঝাতেন, সবাই মিলে চেষ্টা করলে হেলালও অন্যদের মতো সুন্দর জীবনে বেড়ে উঠতে পারে।
‘পাড়া-প্রতিবেশীরা বাবা-মাকে মাঝে মাঝে কিছু বলার চেষ্টা করতো, কিন্তু তারা কানে নিতেন না’, বলেন হেলাল। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সে তৃতীয়।
হেলালকে হাঁটা শিখিয়েছেন তার বড় ভাই আব্দুর রহমান সবুজ। কিন্তু সময় লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর। অন্য শিশুরা যখন ছোটাছুটি করতো তখনও হেলাল উঠানে হামাগুড়ি খেতো। সাত বছর বয়সে বাবার কোলে প্রথম স্কুলে যান হেলাল। নতুন বন্ধু হয়। খেলতে শিখেন।
বাড়ি থেকে মাইল তিনেক দূরে হেলালের স্কুলে বন্ধুরা যখন সাইকেল চালিয়ে যেতো, হেলাল একা একাই হেঁটে পাড়ি দিতেন পুরো পথ।
তিনি সাইকেল চালাতে পারতেন না। ‘অন্যরা যখন সাইকেলে যেতো, আমি চেয়ে থাকতাম। মনে হতো- ইশ্ আমি যদি যেতে পারতাম। আমার যদি একটা সাইকেল থাকতো, যদি চালাতে পারতাম’, আফসোস করে বলেন হেলাল।