বিজয়ের আগে থেকেই বাংলাদেশকে বলা হতো ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে দক্ষিণ এশিয়া পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের সভাপতিত্বে ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সভায় প্রথম শব্দটি ব্যবহার করেন কিসিঞ্জার। এরপর থেকে দীর্ঘ বছর পর্যন্ত প্রসঙ্গ এলেই বাংলাদেশকে বলা হতো ‘বাস্কেট কেস’। তবে, এখন সময় বদলেছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। অর্জন করেছে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা।
দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার, নারী উন্নয়ন, নারী শিক্ষা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। ধান, ফল, মাছ উৎপাদনে এসেছে বিস্ময়করা সাফল্য। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন এখন বাস্তব। বাংলাদেশ এখন দ্রুত উন্নয়নশীল প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে একটি।
এই উত্তরণ এমন এক সময়ে ঘটল, যখন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে বাংলাদেশ। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেন তার ‘ভারত: উন্নয়ন ও বঞ্চনা’ গ্রন্থে লিখেছেন, যে বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা কেউ ভাবেইনি, সে দেশটি সামাজিক উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকে বলেছিলেন, ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনেক সামাজিক সূচক, যেমন: গড় আয়ু, শিশুমৃত্যুর হার, টিকা দেওয়ার মাত্রা, সনাতন প্রজননের হার এবং এমনকি স্কুলশিক্ষার কিছু মাপকাঠিতে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে।
স্বাধীনতার সময়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। ভারতের চেয়েও দরিদ্র ছিল এবং আরো বেশি দরিদ্র ছিল পাকিস্তানের চেয়ে। বর্তমানে দেশে মাথাপিছু আয় দুই হাজার ২২৭ ডলার। অর্থাৎ মানদণ্ডের চেয়ে প্রায় এক দশমিক সাত গুণ। মানবসম্পদ সূচকে নির্ধারিত মানদণ্ড ৬৬-এর বিপরীতে বাংলাদেশের অর্জন ৭৫.৪।